প্রত্যয় নিউজডেস্ক: প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বইয়ের মুদ্রণ কাজ স্থগিত থাকায় নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যপুস্তক পাওয়া নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে এবার বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরও এই সময়ে জেলা পর্যায়ে প্রাথমিকের অন্তত ৮০-৮৫ শতাংশ বই সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত একটি বইও পাঠানো হয়নি। হঠাৎ কাগজের দাম বৃদ্ধি, কাগজের মানে নতুন আরোপিত ‘বাস্টিং ফ্যাক্টর’ (কাগজের শক্তি), মান তদারকি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র প্রদানে জটিলতা এবং মাধ্যমিকের বইয়ের প্রচ্ছদে দেয়ার জন্য স্থিরচিত্র অনুমোদনে বিলম্বসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, বিভিন্ন কারণে এ বছর এখন পর্যন্ত আমরা কোনো বই পাঠাতে পারিনি। তবে আগামী রোববার থেকে প্রাথমিক স্তরের বই পাঠানো শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, মাধ্যমিক স্তরের কাজেরও অগ্রগতি দ্রুত হবে। কেউ যদি কাজ বন্ধ রাখে, তাহলে দরপত্রের শর্তানুযায়ী ক্ষতি তারই। কেননা, নির্ধারিত সময়ের পর বই সরবরাহ করলে তাকে আর্থিক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। করোনা পরিস্থিতি এবং ইজিপিতে (অনলাইন) দরপত্রের কারণে গত বছরের চেয়ে দেরিতে কাজ শুরু করতে হয়েছে। তবে মুদ্রাকরদের বুঝিয়ে হলেও ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।
এ বছর প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩৪ কোটি বই বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি প্রাথমিক স্তরের। বাকিগুলো মাধ্যমিক, দাখিল ও ইবতেদায়ি স্তরের বই। অন্যান্য বছর অক্টোবরে ৩৫ কোটি বইয়ের অন্তত ৬০-৭০ শতাংশ মাঠপর্যায়ে পাঠানোর কাজ শেষ হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত একটি বইও পাঠানো হয়নি।
দরপত্রের শর্তানুযায়ী, প্রাথমিকের বই ছাপাতে মুদ্রাকররা ৯৮ দিন আর মাধ্যমিকের জন্য ৬০ দিন পেয়ে থাকেন। কিন্তু এবার বইয়ের চুক্তি গত ৮ অক্টোবর শেষ হয়েছে। সেই হিসাবে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত মুদ্রাকররা বই ছাপার সময় পাবেন। এ সময়ের আগে বই না দিলে জরিমানারও সুযোগ নেই বলে জানা গেছে।
মুদ্রাকররা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে এবার কাগজের দাম অনেক কমে গিয়েছিল। গত বছর এনসিটিবি যে কাগজ প্রতি টন ৯০ হাজার টাকার উপরে কিনেছে, এবার তারা সেটা কেনে ৬৫ হাজার টাকা করে। আর খোলা বাজারে এই কাগজের দাম ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেমেছিল। কিন্তু কাগজের মিলগুলো পরস্পর সংঘবদ্ধ হয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুদ্রাকররা। এ কারণে কাগজ কেনায় তাদেরকে হঠাৎ হোঁচট খেতে হয়েছে।
অন্যদিকে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথম সর্বোচ্চ দরদাতার কাগজপত্রের ঘাটতি থাকায় তারা কাজটি পায়নি। এ কারণে দ্বিতীয় দরদাতাকে কাজটি দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে বই দিতে পারবে কি-না তা নিয়ে বর্তমানে দ্বিতীয় দরদাতা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, বইয়ের মুদ্রণ কাজের অগ্রগতি বিষয়ে আমাদের তথ্য দেবে এনসিটিবি। পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান যদি এক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলা করে, তাহলে তারাও দরপত্রের শর্তানুযায়ী শাস্তির মুখোমুখি হবে।
এদিকে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পৃষ্ঠায় এবার স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন স্থিরচিত্র ক্যাপশনসহ যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ৭১টি ছবি বাছাই করা হয়। কিন্তু সেই স্থিরচিত্র অনুমোদনেও বিলম্ব হয়। এছাড়া ছবি বাছাই আর ক্যাপশনের ভাষা নিয়েও এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কমিটির ওপর মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা অসন্তুষ্ট ছিলেন। সব মিলিয়ে অনুমোদন প্রক্রিয়া বিলম্ব হয়।
গত মঙ্গলবার মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত অনুমোদনপত্র এনসিটিবি পেয়েছে। অন্যদিকে কভার অনুমোদন না পাওয়ায় মুদ্রাকররা মুদ্রণ কাজ বন্ধ করে রেখেছিলেন।
এর কারণ সম্পর্কে এক মুদ্রাকর বলেন, পাঠ্যাংশ মুদ্রণের পরপরই বাঁধাই না করলে কাগজ নষ্ট হয়ে যায়। তাই তারা আগে কভার ছাপেন। পরে পাঠ্যাংশ ছাপিয়েই বাঁধাই করে ফেলা হয়। কভার ছাপতে না পারায় বই ছাপাই আটকে যায়।